চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম
বাঁশখালীতে অপহরণ হওয়ার ৬ মাসের মাথায়ও উদ্ধার হয়নি অটোরিকশা চালক জয়নাল আবেদীন (১৬)। গত ৮ ডিসেম্বর২০২২সাল গন্ডামারা ইউনিয়নের পাওয়ার প্লান্টের ৩নং গেট সংলগ্ন স্টেশন থেকে ভাড়ায় নিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাকে অন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দিয়েছে পুলিশ। অপহৃত গাড়িচালক নিখোঁজ থাকলেও কালীপুরের কোকদন্ডী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অটোরিকশাটি। থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় গত ১২ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করেছেন জয়নালের বড় ভাই মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নিখোঁজের পরিবার জানায়, লেখাপড়া না করায় জয়নাল আবেদীনকে একটি অটোরিকশা কিনে দেয় তার পরিবার। সে গত দুইবছর ধরে গাড়িটি চালিয়ে আয় করছিল। গত ৮ ডিসেম্বর সকালে গন্ডামারা থেকে সরল যাওয়ার কথা বলে জয়নালের অটোরিকশাটি ভাড়া করে মো. ফাহিম প্রকাশ নাঈম নামে এক যুবক। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কালীপুরের কোকদন্ডী এলাকায়। এতে সন্দেহ হওয়ায় ঘটনার দিন রাতেই ফাহিমকে আটক করে পুলিশ।
পরবর্তীতে অটোরিকশার পেছনে থাকা নাম্বার নিয়ে জয়নালের বড় ভাই মহিউদ্দিনকে এক ব্যক্তি ফোন করে গাড়িটি কোকদন্ডী এলাকায় পাওয়া গেছে বলে জানান। পুলিশ আসামি ফাহিমকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাটারিবিহীন গাড়িটি উদ্ধার করে। পরে ফাহিম ব্যাটারি চাম্বল বাজারে বিক্রি করেছেন বলে জানালে সেখান থেকে চারটি ব্যাটারি উদ্ধার করে পুলিশ। ফাহিমের স্বীকারোক্তিমতে অটোরিকশা এবং ব্যাটারি উদ্ধার হলেও দশদিনেও গাড়িচালক জয়নালকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
নিখোঁজ জয়নাল আবেদীনের বড় ভাই ও মামলার বাদি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, আমার ভাইয়ের গাড়ি ভাড়া নিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
আসামি ফাহিমই আমার ভাইকে ভাড়ায় নিয়েছিল বলে এলাকাবাসী জানালে আমরা পুলিশের কাছে যাই। পুলিশ রাতেই ফাহিমকে বাড়ি থেকে আটক করে। তার কথামতো গাড়ি ও ব্যাটারিও উদ্ধার করেছে। কিন্তু আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি। এ ঘটনায় থানায় মামলাও নেয়নি, শুধুমাত্র জিডি নিয়েছে পুলিশ। যে কারণে আমি আদালতে মামলা করেছি।
তিনি বলেন, ফাহিম গন্ডামারা থেকে গাড়িটি ভাড়া করেছে বলে এলাকাবাসী বলেছে।
আবার কোকদন্ডীতে ফাহিমকে নিয়ে পুলিশ গাড়ি উদ্ধারে গেলে সেখানের লোকজনও ফাহিমকে শনাক্ত করেছেন। ফাহিম সেখানে ব্যাটারি খুলতে মানুষের কাছে যন্ত্রপাতি খুঁজেছিল। ফাহিমই ঘটনাটি ঘটিয়েছে অনেকটা নিশ্চিত হলেও তাকে অন্য মামলায় চালান দেয়াটা রহস্যজনক। দশদিনেও আমার ভাই উদ্ধার না হওয়ায় পরিবারে উদ্বেগ বেড়েছে।
গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক লিটন চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা ভিকটিমকে অনেক জায়গায় খুঁজেও পাচ্ছি না। তবে কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। একটা ছেলেকে ধরা হয়েছে। কিন্তু ওই ছেলে আগের দুটি মামলায় অভিযুক্ত থাকায় চালান দেয়া হয়েছে। যদি এ ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা পাই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আমরা ঘটনাটির ক্লু বের করতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।
অপহরণ হয়েছে কিনা এখনো নিশ্চিত নই। ভিকটিমের ভাই অটোরিকশাটি কোকদন্ডী এলাকায় দেখা গেছে জানালে সেখান থেকে গাড়িটি উদ্ধার করি।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির পূর্বদেশকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’