মোঃমুরাদ হোসেন,টাফ রিপোর্টারঃ আসন্ন প্রায় বেনাপোল পৌরসভার মেয়র নির্বাচন। জনমণে প্রশ্ন, এবার কে হচ্ছেন বেনাপোল পৌর মেয়র? ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অংশ নিয়ে (৮.৬০ বর্গ মিটার আয়তনে) বেনাপোল তৃতীয় শ্রেণী’র পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা কর। ঐ বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা শামছুর রহমান। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে সরিয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশীর আহমদকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. আব্দুল হাকিম, কামরুল আরিফ সহ অনেকে। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয় বেনাপোল পৌরসভাকে।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি বেনাপোল পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম লিটন। ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বেনাপোল পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে। বেনাপোল পৌরসভার নাগরিকরা ২০১১ সালে একবার ভোট দিতে পেরেছিল। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম মেয়রের মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হলেও, সীমানা সংক্রান্ত মামলার জটিলতায় সেখানে আর নির্বাচন হয়নি। ফলে, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন প্রায় ০৬ বছর ৩ মাস নির্বাচনহীন পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মাদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-নারায়ন চন্দ্র পাল কে বেনাপোল পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
সেই আদেশের বলে ২০২২ সালের ৫ মে মেয়র আশরাফুল আলম লিটন শার্শার নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল এর নিকট দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। বর্তমানে বেনাপোল পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা নেই বলে ০৭ নভেম্বর/২০২২ ইং তারিখের এক আদেশে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং ০৩ এপ্রিল/২০২৩ ইং তারিখ আইন ও বিচার বিভাগের আদেশ পত্রে তা জানানো হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়ায় বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন কে ঘিরে পৌর এলাকা জুড়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুর করেছে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন সরকারী দলের এবং বিএনপি-জামাতের প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোড় দেখা গেছে। তবে,বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আ,লীগ চাইছে মেয়র পদটি তাদের পক্ষে থাকুক। অপরদিকে,বিএনপি-জামাতের রাজনৈতিক গতিশীলতা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’র কারনে তাদের কোন প্রার্থীকেই এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে প্রচার কাজে দেখা যাচ্ছে না। ফলে, আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে পুণরায় আ.লীগ প্রার্থী জয়ী হবেন বলে বিশিষ্ঠ জনেরা মনে করছেন।
এবারের বেনাপোল পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর নামের তালিকায় যে কয়জন প্রাথী’র নাম মাঠে-ময়দানে উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ক্ষমতাসীন পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক- মোঃ নাসির উদ্দীন(১৭/১১/২০১২ ইং হতে চলমান)। তার সংক্ষিপ্ত জীবণ বিবরনীতে জানা যায়,তার পিতার নাম- মৃত শামছুর রহমান, তিনি বেনাপোল পৌরসভাধীন বড় আঁচড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য। চাচা ফজলুর রহমান সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগ। ২০০৪ সালে বিএনপি সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। উদীয়মান এই রাজনীতিবীদ একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী,বর্তমানে তিনি বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-১ পদে দায়িত্ব পালণ করছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা:- বিএসসি অনার্স, এমএসসি ( ফিজিক্স)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা। সেখানে অধ্যায়ণরত অবস্থায় তিনি মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এর আগে ১৯৯০-১৯৯১ তে যশোর এমএম কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে গড়া, সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ৮৫,যশোর-১শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের স্নেহধণ্য এবং একান্ত আস্থাভাজন ব্যাক্তি মোঃ নাসির উদ্দিন এক সাক্ষাতকারে বলেন, “আদালতে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভোট না হওয়ায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আশা পোষণ করেন এমন নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্থ। দীর্ঘদিন পৌরসভার নির্বাচন না হওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সমাজ। সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন কৌশলে নিজের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে পৌরসভার নির্বাচন আটকে রেখেছিল দীর্ঘদিন ধরে।
ভোট নাগরিক অধিকার, বেনাপোলবাসী চাই জটিলতা কাটিয়ে পৌর নির্বাচন হউক, জনগন ভালো নাগরিক সুবিধা পাক, এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব ভোট হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। একবার নির্বাচন করে দুই টার্ম ক্ষমতায় রয়েছে মেয়র কাউন্সিলররা। এতে একঘেয়েমি হয়ে যায়। ভোট না হলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয় না। আমরা ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে নাগরিক অধিকার ফিরে পেতে চাই”।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,”ক” শ্রেণীভুক্ত বেনাপোল পৌরসভা থেকে নাগরিকদের জন্য যে সকল সেবা প্রদানের বিষয়গুলি আছে যেমন- কর আদায়,ময়লা আবর্জনা ও ড্রেণ পরিস্কারকরণ,রাস্তা-ঘাট নির্মাণ/পূণঃ নির্মান,পুকুর খনন/ভরাট, পাকা/সেমিপাকা/কাঁচা ঘর নির্মাণ বা ধ্বংস সাধন, বিদ্যমান ভবন বা স্থাপনার ব্যবহার পরিবর্তন ইত্যাদির নক্সা অনুমোদন,জন্ম সনদ প্রদান,লাইসেন্স প্রদান,নাগরিকত্বের সনদ প্রদান,স্বাস্থ্যগত সুবিধা ইত্যাদী সকল সেবা প্রদানের বিষয়ে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালনা পূর্বক “ক” শ্রেণীর এই পৌরসভাকে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই”।
নতুন প্রজন্মের আইকন,তরুণ এই রাজনীতিবীদ আসন্ন বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে শতভাগ জয়ের আশা নিয়ে পৌর নগরবাসীর দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন।