রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

মূল ঠিকাদারকে বাইরে রেখে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে সাব লীজ প্রদান মেহেরপুর পৌরসভার গোড়পুকুর উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি

রিপোর্টার নাম:
  • আপডেট সময় : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ৫৯ বার পঠিত:

সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ:

মেহেরপুর পৌরসভার গোড়পুকুরের সৌন্দর্য্যবর্ধন ও ভূমি উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তদন্ত
রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, মেহেরপুর পৌরসভার ১৭,৬৭৫.৮৮ বর্গমিটার
সৌন্দর্য্যবর্ধন ও ভূমি উন্নয়ন কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ১৩ কোটি ২৫ লাখ ২১
হাজার ২৬৪ টাকা ৬৩ পয়সা যার চুক্তিমূল্যে ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৮
টাকা ২৮ পয়সা। কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ ২১ মার্চ ২০২১, কাজ সমাপ্তির
তারিখ ২০ মার্চ ২০২২। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মেসার্স মাসুমা বেগম।
মূল ঠিকাদার কাজ না করে সাব লীজ দিয়ে কাজ করিয়ে টেন্ডারের বিধি চরমভাবে
লংঘন করেছে। ত্র“টিপূর্ণ ডিজাইন, যেনতেন ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে মেহেরপুর
পৌরসভার এই প্রকল্পটি।
অভিযোগ উঠেছে, পিপিএ-২০০৬ সেকশন ৩১(৩) এর নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে
ক্রয়কার্য সম্পাদন করেছে। ল্যাব টেষ্টে নির্মান সামগ্রীর মান অবতীর্ণ।
আইএমইডির প্রতিবেদন রিপোর্টে দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পৌর প্রকৌশলীর
বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। প্রকল্প পরিদর্শনের পর
প্রকল্পের নানান অসংগতি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় কালে পৌর
মেয়র জানান, মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে রাজশাহীর ঠিকাদার গোলাম সারওয়ার এই
প্রকল্পের কাজ করেছেন।
মেহেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ডিজাইনে পাইলক্যাপ ধরা নেই।
এই জন্য পাইলিং এর গ্রেট বীম এর অবস্থানগত বিচ্যুতি হয়েছে।
অথচ প্রকল্পের ডিজাইনিং পরীক্ষান্তে দেখা যায়, এ্যামফিথিয়েটার এর
ক্ষেত্রে পাইলক্যাপ ধরা আছে যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন
করেনি। পাশাপাশি প্রকল্পের এই অঙ্গের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়োজিত
মেহেরপুর পৌরসভার (ডিপিপি অনুযায়ী) কারিগরি বিভাগ চরমভাবে উদাসীনতা ও
দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
পাবলিক টয়লেট নির্মানে যে ইট ও বালি ব্যবহার করা হয়েছে, সরেজমিনকালে তা
যথাযথ মানের বলে মনে হয়নি। ঢালাই এর কাজে বালুর এফএম ২.৩ থেকে ২.৫ থাকার
কথা কিন্তু ল্যাবটেষ্টে এফএম ১.৬৬ পাওয়া গেছে। ইটের ক্ষেত্রেও ব্যাপক
অনিয়ম ও গরমিল পাওয়া গেছে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (সাব কন্ট্রাক্টর)
এর লেক উন্নয়ন কাজ করার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
ডিপিপির সংস্থান ও ডিজাইন মোতাবেক প্রকল্পের কর্মকান্ড দেখভালের দায়িত্ব
পৌরসভার প্রকৌশল দপ্তরের। এক্ষেত্রে তারা সম্পূর্নরূপে ব্যর্থতার পরিচয়
দিয়েছেন। সুতরাং এই ম্যানেজমেন্ট দিয়ে গুনগত মানের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব
নয়।
পৌরসভার গোড়পুকুরের সীমানায় পশ্চিম দিকে একটি মাছের আড়ৎ রয়েছে। এই আড়ৎটি
উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও রহস্যজনকভাবে পৌরকর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি তা
করেনি।
পৌরসভার গোড়পুকুরের ৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে।
পাশেই ব্যক্তিমালিকানা বাড়ির সীমানা প্রাচীর রয়েছে। সীমানা প্রাচীরের পর
থেকে পৌরসভার জায়গা হলেও উক্ত ৫ ফুট জায়গা বাদ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ সঠিক
হয়নি। ঢালাই কাজে ষ্টীল সাটারিং এর পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের ফ্রেম করা
হয়েছে, যা কার্যাদেশের বর্ণিত শর্তের চূড়ান্ত লংঘন হয়েছে। ২য় ঘাটের ঢালাই
কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় ঘাটের তলায় ফুটো দেখতে পাওয়া গেছে। এই ঘাটের
সর্বশেষ পিলার ৫ ও ৬ দুটি বাঁকাভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এমফি থিয়েটারের
পাইলিং এবং এর চারিদিকে রিং বীমের ঢালাইসহ প্লাটফর্ম ঢালাই অনেক নিচুতে
দেখা গেছে। রিং বীমের উপর যে গ্রেটবীম ঢালাই করা হয়েছে সেখানে ব্যাপক
অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেছে। রিং বীমের নিচের প্রিকাষ্ট পাইল এবং রিং
বীমের উপরের কলামের সেন্টার অসাদৃশ্য।
নির্মানস্থলে মেজারমেন্ট বুক পাওয়া যায়নি। ঘাট এবং এমপিথিয়েটারের নির্মান
কাজে বাস্তব অগ্রগতি বিবেচনায় না নিয়ে বাস্তব কাজের অতিরিক্ত অর্থ
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে পরিশোধ করা হয়েছে।
মেহেরপুর পৌরসভার ২০২০ – ২০২১ অর্থ বছরে অডিট আপত্তি রয়েছে। আপত্তিগুলো
হলো, ভ্যাট, আয়কর ও স্যালভেজ ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করা। এছাড়াও ২০২১-২০২২
অর্থবছরে অডিট হয়নি। প্যাকেজটির আওতায় ২০টি সাব কম্পোনেন্ট রয়েছে, যার
মধ্যে ৫টি সাব কম্পোনেন্ট’র কাজ চলমান রয়েছে। পরিদর্শনের সময় ৭/৮ জন
শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। চুক্তির মেয়াদ ইতিমধ্যে প্রায় ১ বছর
অতিবাহিত হলেও প্যাকেজটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র প্রায় ১৬%। সাইনবোর্ড
স্থাপন বাবদ ১.১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সাইনবোর্ডটি প্রকল্প স্থানের
সম্মুখভাবে স্থাপন না করে মাছের আড়তের পাশে একটি ইলেকট্রিক খাম্বা ও একটি
বাঁশ গেড়ে তার সাথে স্থাপন করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী পৌরসভার গোড়পুকুরের
উত্তর পার্শ্বের একটি ঘটলা নির্মানের সংস্থান থাকলেও নকশা বহির্ভূত ভাবে
তা পশ্চিমদিকে নির্মান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নকশা মোতাবেক নির্মান করা
হয়নি।
মেহেরপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র
উঠে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, নির্মানের নামে এবং উন্নয়নের নামে এই
প্রকল্পে হরিলুট কারবার চলছে। মূল ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে যাদের এই কাজের
অভিজ্ঞতা নাই এমন সাব লীজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজের নামে অকাজ
হচ্ছে বেশি। যে গতিতে কাজ চলছে তা কবে শেষ হবে এমন কোন তথ্য এই
প্রতিষ্ঠান দিতে পারেনি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চ পদস্থ
কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মেহেরপুর পৌরবাসী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই রকম আরো সংবাদ

© All rights reserved © 2022  A2zbarta.Com
Design & Development BY Hostitbd.Com