শাহাজাহান সরকার কাজল(সৈয়দপুর উপজেলা প্রতিনিধি)
নীলফামারীর সৈয়দপুরে লক্ষণপুর বালাপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিবাদে মাদ্রাসার সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্তার সৃষ্টি হয়েছে।এদিকে গোপনে নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভে অভিযুক্ত মাদ্রাসার সুপার দীর্ঘ ৪ মাস ধরে মাদ্রাসায় না এসে মাসিক বেতন তুলে খাচ্ছে। সুপার দীর্ঘদিন মাদ্রাসা না আসায় মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে। গতকাল (২৬/৭/২২) সরজমিন মাদ্রাসা গিয়ে দেখা যায় সুপারের অফিস বন্ধ।অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস না নিয়ে বসে আড্ডা দিছে।মাঠে ছাত্র/ছাত্রীরা খেলাধুলা করছে।সুপার না আসা প্রসঙ্গে শিক্ষকদের জিঙ্গেস করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন,সুপার নিজের মতো করে প্রতিবার গোপনে কমিটি গঠন করে।এক্ষেত্রে কোন বিধি-বিধানের তোয়াক্কা তিনি করেন না।প্রতিবারের ন্যায় এবারও তিনি গোপনে কমিটি গঠন করেন,যা কেউ জানেনা।এমন কি শিক্ষকরা পর্যন্ত জানেন না।গোপনে কমিটি গঠন করা নিয়ে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সাথে সুপারের ঝামেলা হওয়ায় তিনি গত ৩০/০৩/২২ তারিখ থেকে মাদ্রাসায় আসেন না। সুপার ছুটিতে আছেন কিনা প্রশ্নে তারা বলেন,আমরা এ বিষয়ে জানি না।ভারপ্রাপ্তের দায়ীত্বেও কেউ নেই। এদিকে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,সুপার তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য প্রতিবারই নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে আসছেন।২০১৯ সালেও এহেন কাজ করায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে আর কখনো এমন কাজ করবেন না বলে তিনি প্রতিঙ্গা করেন।তারপরও এবার তিনি গোপনে কমিটি গঠন করেন।আমরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করায় সুপার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাচ্ছে। এবিষয়ে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউঃপিঃ সদস্য স্বপন চন্দ্র রায় বলেন,সুপারকে ২০১১ সাল থেকে বিধি মোতাবেক কমিটি গঠনের জন্য অনুরোধ করে আসছি,তারপরও তিনি প্রতিবারই গোপনে কমিটি গঠন করেন। তিনি বলেন,কমিটি যেহেতু বিধি মোতাবেক গঠিত হয়নি তাই এই কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করা না হলে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।তিনি বলেন, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সাথে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য সুপার আমাকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলো,কিন্তু আন্দোলনকারীরা সুপারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন,একমাত্র সমাধান কমিটি ভেঙ্গে বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি গঠন করা। মাদ্রাসার বর্তমান কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন,২০১৯ সালে গোপনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলাকালে আমরা প্রতিবাদ করায় সবার দাবীর প্রেক্ষিতে আমাকে কমিটিতে সদস্য করেন।কিন্তু কোন মিটিংয়ে তিনি আমাকে ডাকেন না।নতুন করে কমিটি গঠন করা হলেও আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।পরে জানতে পারি আমাকে এবারও সদস্য করা হয়েছে। তিনি বলেন সুপার প্রতিবার এভাবেই গোপনে কমিটি গঠন করে আসছেন। তিনি আরও বলেন,এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের দাবীর প্রেক্ষিতে আমি সহ ৫ জন সদস্য প্রথমে সভাপতি বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দিলে সভাপতি তা নিতে অনিহা প্রকাশ করেন। পরে আমরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর কমিটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেই।কিন্তু আজও কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন,সুপার বাড়িতে বসে বসে সরকারের টাকা ভোগ করে চলেছেন,এদিকে সুপার না থাকায় মাদ্রাসায় কোন ক্লাস হচ্ছেনা। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা রুবেল আমিন সরকার বলেন,সুপার গোপনে পকেট কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় করে খাচ্ছেন।নিয়োগ বানিজ্য করতেই তিনি রাতের আধারে বিধি বহির্ভূত ভাবে পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন।তিনি বলেন সুপার গোপন কমিটিতেই ক্ষান্ত হননি,ঐ কমিটিতে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ফেরদৌসি বেগম নামে একজন মহিলার নাম অন্তর্ভুক্ত করেন।কিন্তু আমার এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে খোজ নিয়েও ঐ নামের কোন মহিলার অস্তিত্ব খুজে পাইনি,তারমানে তিনি ভুয়া মহিলাকে কমিটিতে সদস্য করেছেন। তিনি বলেন, গোপনে কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক প্রতিবাদ করায় ঐ সুপার আমিসহ আমার দুই ভাইয়ের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন,প্রতিবাদ করার পর থেকে সুপার বিষয়টি ম্যানেজ করার জন্য আমাকে নানা রকম প্রস্তাব দেয়।কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কল্যাণের স্বার্থে আমি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার কথা বলি। রুবেল আমিন সরকার বলেন,আমরা সুপারের দুর্নীতি ও গোপন কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করি।অভিভাবক ও এলাকাবাসী মিলে অবৈধ কমিটি বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজসহ চেয়ারম্যান (বাঙ্গালীপুর ইউ,পি,), চেয়ারম্যান,সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,সৈয়দপুর, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সৈয়দপুর, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,সৈয়দপুর থানা, সভাপতি,সৈয়দপুর প্রেসক্লাব, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, নীলফামারী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা সত্তেও আজও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,কমিটি গঠন নিয়ে সুপারের সাথে এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের একটা ঝামেলা হয়েছে।আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি। মাদ্রাসায় সুপারের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন,আমি যতোদুর জানি সুপার মাঝে মাঝে অফিস করেন,তিনি নিয়মিত অফিস না করার বিষয়টি আমি জানি না। তিনি বলেন,আমরা তদন্ত করে দেখবো।যদি সত্যিই সুপার ৪ মাস ধরে অফিস না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সুপারের নানা দুর্নীতি,গোপনে কমিটি গঠন ও দীর্ঘদিন মাদ্রাসায় না আসার বিষয়ে তার ব্যবহৃত (০১৭২৮৪৬২৬৯৭) মোবাইলে যোগাযোগ করে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ফোন কেটে দিয়ে তা বন্ধ করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসা সঠিকভাবে পরিচালনা ও শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে অবৈধ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বিধি মোতাবেক নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানান এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।
Leave a Reply