লিটন সরকার রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাদের দেখার কেউ নেই। ঠাঁই হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন জরাজীর্ণ বিএস কোয়াটারে। সামান্য বৃষ্টিতেই টপ টপ করে পড়ে পানি। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ থাকলেও বৈদ্যুতিক বাতির আলো তাদের জন্য স্বপ্ন। রাতে কুপি বাতি জ্বলান , তৈলের অভাবে সেটাও বন্ধ থাকে মাঝে মধ্যে। কেউ দয়া করে সামান্য চাল দিলে কোনরকম কষ্ট করে সেটা রান্না করে চালান ৫-৬ বেলা পর্যন্ত। গ্রামের কারো বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া ছাড়া কপালে জোটে পান্তা ভাত ও মরিচ।
মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকেন জাদোর ও তার স্ত্রী। জীবন যুদ্ধের এই করুন গল্পটি ৯০ বছর বয়সী জাদোর আলী ও ৮০ বছর বয়সী সফুরা খাতুন দম্পতির। সহায় সম্বল হীন এই দম্পতি বাস করেন কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিলষদ সংলগ্ন একটি ভাঙ্গা পরিত্যক্ত বিএস কোয়াটারে।
জানা গেছে বৃদ্ধ এই দম্পতির নিকটাত্মীয় বলতে একটা মেয়ে আছে তাও বিয়ে-সাদী হওয়ার পর জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় থাকেন । বৃদ্ধ দম্পতির কোন জায়গা জমি নেই, গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের জীবন। অতীতে জাদোর কাঠ চেরাইয়ের কাজ করতেন। বয়সের ভারে এখন যেন নিজের কাছেই নিজের শরীর বোঝা হয়ে গেছে, জাদোরের স্ত্রীর অবস্থাও একই। তাদের এই দুর অবস্থায় যে মানুষের প্রাণটি সবচেয়ে বেশি কাঁদে তিনি হচ্ছেন খঞ্জনমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম । তাইতো তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাদোরের এক বেলা খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। দুপুর বেলা নিজের জন্য আনা খাবারের সাথে অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসেন তিনি, সেটা পরম যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে নিজ হাতে তুলে দেন অসহায় জাদোরের মুখে। খঞ্জনমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল মাঠে এমন দৃশ্য হর হামেশাই চোখে পড়ে পথচারী সহ সবার। এই দৃশ্য যেন নাড়া দেয় সকলের মন। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও জাদোরকে আপন করে নিয়েছেন, ভালোবেসে পানি এনে দেন, পান এনে খাওয়ান।
বৃদ্ধ জাদোর আলী জানান পানি পড়ে কোন বছর বাদ নাই সারা বছর পানি পড়ে এক হাঁটু পানি হয়, ভাতের নলা ওঠেনা তুলতেএক দুপুর নাগে, আমরা থাকার ঘর চাই”।
খনজনমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন জাদোর আলী অসহায় একজন মানুষ। মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ওনাকে একটি ঘর দেন তাহলে তার বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কাটবে।
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন বিষয়টি নিয়ে কি করা যায় দেখছি।